কাজী নজরুল ইসলামের নারী কবিতায় লিখেছেন “বিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর” যা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের স্বরণে লিখেছেন দেওয়ান নাজমুছ ছাকিব

 নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারী-পুরুষের সম-অধিকার নিশ্চিত করা, নারীর কাজের স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য উদ্‌যাপনের উদ্দেশ্যে নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের কারণে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও এখনও এদেশের নারী সমাজ সমান অধিকারের লক্ষ্যে লড়াই করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের মতো বিপুল সম্ভাবনাময় দেশটিকে সকলক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে হলে এবং মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে দেশের নারীদের সফল করে তোলার বিকল্প নেই। কারণ অর্ধেক জনগোষ্ঠী, নারী সমাজের অগ্রগতি ও সাফল্যের মধ্যে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন লুকিয়ে রয়েছে।

১০ বছর আগে শ্রমশক্তিতে পুরুষের তুলনায় নারীরা অনেক পিছিয়ে থাকলেও এখন পাল্লা দিয়ে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। সরকারি চাকরিতে নারীর সংখ্যা একসময় খুব কম হলেও এখন তা অনেক বেড়েছে। এমনকি বেশি দিন বাঁচার ক্ষেত্রে পুরুষকে পেছনে ফেলেছেন নারী। এ দিকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের উচ্চতর স্তরে বাংলাদেশের উত্তরণের পেছনে বড় উপাদান হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন নারাীরা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রপ্তানিমুখী উন্নয়নের ধারা অনুসরণ করে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথেই এগিয়ে চলেছে। গত এক দশকে দেশের রপ্তানি আয় মার্কিন ডলারের হিসাবে ৮০ শতাংশ বেড়েছে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে তৈরি পোশাক খাত।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকার কথাটা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী।বাংলাদেশের মানুষ প্রথমবারের মতো একজন নারীকে স্পিকার হিসেবে দেখেছে।  শিক্ষামন্ত্রী, জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীরা রাষ্ট্রদূত হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রী, সচিবসহ জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধি বাড়ছে উল্লেখযোগ্যভাবে। রাজনৈতিক দলগুলোতেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় নারীদের অংশগ্রহণ ও তাদের কৃতিত্বপূর্ণ অবদান দিন দিন বাড়ছে। শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও নারীর অগ্রগতি অব্যাহত।

কিছু কারণে নারী ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সারা বছর নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার মতো বিষয়গুলো দেখে পরিবারগুলো শঙ্কিত। এসবের ভয়ে অনেক অভিভাবক তার উচ্চশিক্ষিত মেয়েটিকে কর্মক্ষেত্রে দেওয়ার আগেই বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এসবই সমাজের অস্থিরতার প্রতিফলন। এদিকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ নারীকে উপাজর্নের জন্যে বাইরে যেতে দিলেও তার উপর ঘরের অমূল্যায়িত কাজ চাপিয়ে রাখছে। ফলে নারী তার সাফল্যের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না। আর নারীদের সস্পত্তিতে অধিকার না থাকায় পরিবারে তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হচ্ছে। একুশ শতকের জাতীয়, অর্থনেতিক,সামাজিক তথা সার্বিক চ্যালেন্জ মোকাবিলা করতে নারীদের অারো সক্রিয় হতে হবে। সমাজের বিষাক্ত ছোবলকে পিছিয়ে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে তবেই হবে অর্থনৈতিক তথা সার্বিক মুক্তি।

 

দেওয়ান নাজমুছ ছাকিব
বিবিএ ২য় বর্ষ ( হাবিপ্রবি)
সিএমএ ফাউন্ডেশন লেবেল ( আইসিএমএবি)
ইয়ুথ এমপি ( জয়পুরহাট -১)

Categories: FeatureNews

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *